সংবাদদাতা উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিদ্ধার্থ সাহা’র বিরুদ্ধে ইয়াবা ও মানব পাচারকারীদের সাহায্য, ভূমি দস্যুদের সাথে চুক্তি, ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি, বিচার দিতে গেলে মারধর, এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।
গত ২ মে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সিদ্ধার্থ সাহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধান, চট্টগ্রাম রেইঞ্জের ডিআইজি, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তারা। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অর্থের লোভে পড়ে মানব, ইয়াবা পাচারে সহযোগি হয়ে অপরাধ করছেন তিনি। ক্ষমতার দাপটে জালিয়াপালং ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন। তার এহেন ঘৃণিত কাজে পুলিশের সম্মান আজ প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগকারীরা বলেন, গত ১৪ এপ্রিল মনখালী গ্রামের মৃত অছিয়র রহমানের ভোগ দখলীয় জমি প্রতিপক্ষের কাছে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দখল করে দেন। ১ মে ইনানী মৌজার খাস খতিয়ানের জমি জনৈক জালাল আহমদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দখল করে দেন। বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া ইয়াবার একটি অংশ আইসির (সিদ্ধার্থ সাহা) গাড়ি চালক মো: শফির বিল এলাকার মৃত জাফর আলমের ছেলে আবু তাহের ও মনখালী গ্রামের মৃত রহমত শরিফের ছেলে তোফাইল আহমদ’র বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে আটক হন। একাধিক মামলার আসামীও। সর্বশেষ মনখালীতে জসিম হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আইসি সিদ্ধার্থ সাহা মো: শফিরবিল এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে আব্দু ছালামকে ক্রস ফায়ারে খুন করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছেন। মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করতে অভিযুক্ত আইসি প্রকাশ্যে বলেন,“মেরিন ড্রাইভে বালিশ ছাড়া শোয়াইয়া দেব”। অভিযোগে আরো বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে সিদ্ধার্থ সাহার সখ্যতা এমন যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে একমূহুর্তেও ভাবেন না। এমন কি দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়েও বিরুপ মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো: ইউনুছকে পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে প্রকাশ্যে মারধর ও গালিগালাজ করেন। জালিয়াপালং ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নুরুল আবছার নান্নুর বাড়িতে তার প্রতিপক্ষের সাথে নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারিদের মারধরের শিকার হয়ে নান্নুর মা’য়ের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সহকারি পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান’র নেতৃত্বে তদন্ত চলছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ তুলে বলেন, প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে তদন্ত করলে এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে দাবি তাদের। সোনারপাড়া বাজারে জনৈক মনঞ্জুর ব্রাদার্স নামে একটি মুদির দোকানের কর্মচারিকে বিনা কারণে মারধর করার অভিযোগ করেছেন তারা। তারা আরো বলেন, স্থানীয় জাগির হোসেন সিকদারের ছেলে আবু কাইছারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ২০ বস্তা সিমেন্ট, মনখালী কোনার পাড়া এলাকার মো: শফির চা’র দোকান থেকে ২৮০০০ টাকা, মো: উল্লাহর ছেলে আবু ছৈয়দ’র কাছ থেকে ১০০০০ টাকা, ফরিদ আহমদের ছেলে মো: মহিবুল্লাহর কাছ থেকে ৫০০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগে ভোক্তভূগী সকলের মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করে অভিযুক্ত পুলিশ ফাঁড়ির আইসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। অভিযোগপত্রে জালিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান এসএম ছৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল আমিন চৌধুরী রাশেল, উখিয়া উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি লিয়াকত আলী বাবুলসহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রত্যেক ওয়ার্ডের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকগণ সাক্ষর করেছেন।
এদিকে ১৩ মে রাত ৮টার দিকে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিদ্ধার্থ সাহা’র কাছ থেকে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়াবা ও মানব পাচারকারীদের কাজে বাঁধা দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। এব্যাপারে উদ্ধতন কতৃপক্ষ অবগত আছেন বলেও তিনি জানান।