চরম হতাশা নিয়ে মাঠে ফিরছে লবণ চাষীরা - কক্সবাজার কন্ঠ

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার

প্রকাশ :  ২০১৯-১১-২৪ ১২:২৬:৩৩

চরম হতাশা নিয়ে মাঠে ফিরছে লবণ চাষীরা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: পাইকারি বাজারে বর্তমানে লবণের কেজি ৫ টাকার কম হওয়ায় কক্সবাজার উপকুলের লবণ চাষিদের মাঝে দুর্দিন চলছে। অনেকে গত বছরের মজুদ করা লবণ বিক্রি করেনি ন্যায্যমূল্যের আশায়। অবশেষে চরম হতাশা আর দুঃখ নিয়ে মাঠে ফিরছেন লবণ চাষিরা। তারা চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে কাজ শুরু করেছেন। কক্সবাজার উপকূলে পুরোদমে চলছে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া। চিংড়ি ঘের গুঁটিয়ে বর্তমানে লবণ চাষীরা পুরোদমে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে নেমেছেন। লবণ চাষীরা দিনের পুরোটাই সময় ব্যয় করছেন লবণ উৎপাদনের কাজে।
বিসিকের দেয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফসহ ৬০ হাজার একর জমিতে ৫৫ হাজারের বেশি চাষী লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত। তবে চাষীরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাঠ থেকে উঠে আসা লবণে দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। কিন্তু এখন তাদের যতো ভয় লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে।[the_ad id=”36442″]
চাষীরা বলেন, লবন যথেষ্ট পরিমান উৎপাদিত হচ্ছে কিন্তু দাম ভালো পাচ্ছি না। পানি খরচ, জমিন খরচ এবং শ্রমিকদের খরচ দিয়ে আমরা পাই সাড়ে ছয় টাকা। এবং লবন বিক্রিও হয় সাড়ে ছয় টাকা এতে আমাদের কিছুই থাকে না। সরকার ধান বা অন্য পণ্যের দাম নির্ধারিত করে দিচ্ছে লবনের দাম নির্ধারন করছে না।
প্রতি বছর লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় থাকেন কক্সবাজার উপকূলের চাষীরা। এ অবস্থায় ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে লবণ বোর্ড গঠনের দাবি জানালেন লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি। তবে বিসিকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলছেন, মান সম্পন্ন লবণ উৎপাদনে চাষীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা।
এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল, ভারুয়াখালি, চৌফলদন্ডি, পোকখালী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও প্রায় কয়েক হাজার লবণ চাষী লবণ উৎপাদনের কাজে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু ন্যায্য মূল্যে লবণ বিক্রি না হওয়ার ফলে চাষীরা লবণ উৎপাদনে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। এরপরও বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা লবণ মাঠ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বিগত দিনের মত উপকূলের অনেক আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে লবনের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায়। অপরদিকে লবণের দাম কম হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসির ঝলকও দেখা দিচ্ছে না। বলতে গেলে চাষিদের নিরব কান্নার সুর বয়ে যাচ্ছে। যদি শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণ চাষী পরিশ্রমের সুফল না পেয়ে এবারও পথে বসবে।
বর্তমানে সরকার লবণ চাষীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানী বন্ধ করে দিলেও চাষীরা একটি সিন্ডিকেটের কারণে দাম পাচ্ছেন না। উল্লেখিত ইউনিয়নের উৎপাদিত লবণগুলো ইসলামপুর শিল্প এলাকায় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) উপকূলীয় চৌফলদন্ডি, গোমাতলী এলাকায় তাদের নিজস্ব তদারকির মাধ্যমে লবণ উৎপাদন করে থাকে।[the_ad_placement id=”after-image”]
উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার লবণ চাষী সাইফুদ্দিন বলেন, দাম কম হওয়ায় আমরা হতাশায় নিমজ্জিত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, চাষিদের দুঃখ বিবেচনা করে লবণের দাম বাড়ানো হোক। কারন লবণ চাষ গোমাতলীর ৮০% মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
ইসলামপুরের লবণ ব্যবসায়ী হারুনর রশিদ বলেন, সদরে যে লবণ উৎপাদন হয় তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বাহিরেও রপ্তানী করতে পারবে। কিন্তু কিছু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বাহির থেকে লবণ আমদানি করে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। বর্তমান সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করায় বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক লবণ চাষী ন্যায্য মূল্য ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পাবে এই আশায় লবণ মাঠে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে চাষিরা।
সরকার যদি উপকূলে উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানীতে সহযোগিতা করে তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশি উপকৃত হবে মানসম্মত লবণ উৎপাদনে আরো বেশি মনোযোগী হবেন এমনটি প্রত্যাশা কক্সবাজার উপকূলের লবণ চাষীদের।

আরো সংবাদ