নূরে খোদার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী - কক্সবাজার কন্ঠ

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ :  ২০২১-০৩-০৪ ১৪:০৯:০১

নূরে খোদার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী

নূরে খোদার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী

বিশেষ প্রতিনিধি : কয়েকদিন আগে যোগ দেয়ায় গণবদলীতে নাম ছিল না তার। সেই সুবাদে ৫ মাসে চকরিয়া থানার মহা ঘুঁষখোর কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার কর্মকান্ড বিব্রতকর ছিলেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও। মামলার তদন্ত বাণিজ্য করে কৌশলে হাতিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। বাদী-বিবাদী পক্ষের নারীদের নিয়ে হোটেলে উঠারও অভিযোগ। গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে এসব চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
এদিকে ১ মার্চ কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার রোজিনা খাতুনের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাই করা ৩ লাখ টাকার ব্যাগটি এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া আটক করা যায়নি ৩ পুলিশের ২ সহযোগী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের দেয়া ২ দিনের সময় অনুযায়ী ৩ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।

জানাগেছে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর কক্সবাজার জেলা পুলিশের সকল সদস্যকে একযোগে বদলি করা হলেও সেই গণবদলি থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন এসআই নূরে খোদা সিদ্দিকী। তবে গণবদলি থেকে বাঁচলেও তিনি থেমে থাকেননি, চাঁদাবাজি করে গেছেন নিয়মিত! এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সর্বশেষ কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়া পাড়ায় ঘরে ঢুকে রোজিনা নামের এক নারীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে ঘটনায় কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে সম্প্রতি যোগ দেয়া এই পুলিশ কর্মকর্তার কাহিনী এখন সবার মুখে মুখে।

স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজারে পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে জেলার সবক’টি সার্কেল ও থানায় নতুন কর্মকর্তাসহ পুলিশ কনস্টেবল যোগ দেয়ার পাঁচমাস অতিবাহিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ শোনা না যাওয়ার পাশাপাশি সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান ও বস্তাভর্তি টাকা জব্দ করে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

তবে গত ১ মার্চ কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই নুর-ই খোদা সিদ্দিকী, কনস্টেবল আমিনুল মোমিন ও মামুন মোল্লা টাকা ছিনতাইয়ে নিজেদের জড়িয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ফের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এর আগে নানা অভিযোগ উঠার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে খোদা সিদ্দিকীকে সপ্তাহ খানেক আগে চকরিয়া থানা থেকে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি করেন। সেখানে যোগ দিয়েই নূরে খোদা জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ে। বিষয়টি বেশ আলোচিত হওয়ার পর চকরিয়ার ভুক্তভোগী লোকজনও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

চকরিয়া লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আইয়ুব মো. ইকবাল বলেন, জায়গার নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আমার একটি দাঁত পড়ে যায় এবং আমি রক্তাক্ত জখম হই। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা রুজু করতে এজাহার দায়ের করলে সেটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই নূরে খোদা সিদ্দিকী। এরপর সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলা রুজু করে দেয়ার কথা বলে তিনি দুই দফায় ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি আমার প্রতিপক্ষের সাথে আঁতাত করে উল্টো আমিসহ পরিবার অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে সহায়তা করেন। এতে আমি নিজেসহ পরিবারের অন্যান্যরা হয়রানির মুখে পড়ি।

ভুক্তভোগী আইয়ুব মো. ইকবাল আরও অভিযোগ করে বলেন, পাল্টা মামলায় আসামি হয়ে যাওয়ার পর আমি থানায় যেতে পারিনি। এজন্য আমার স্ত্রী আশরাফুন্নেছা থানায় গিয়ে ওসির কাছে এসব বিষয় খুলে বলেন। কিন্তু এরপর থেকে আমরা উল্টো নূরে খোদার হুমকি-ধামকিতে তটস্থ হয়ে পড়ি।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক খুটাখালীর এক যুবলীগ নেতা বলেন, আমার নিকটাত্মীয়ের একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার বিপরীতে এসআই নূরে খোদা সিদ্দিকী নগদ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নেয়ার পরও তিনি মামলার প্রতিবেদন না দিয়ে উল্টো বকাঝকা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সিনিয়র এক নেতার দৃষ্টিগোচর করলে চকরিয়া থেকে বদলি হওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ডুলাহাজারা ইউনিয়নের জনৈক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি হামিদুল হক অভিযোগ করে বলেন, পারিবারিক বিরোধ ও আমার ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে আদালতে একটি মামলা করি। আদালতের নির্দেশে ওসি সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেন এসআই নূরে খোদা সিদ্দিকীকে। তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার পর থেকে তিনি খারাপ আচরণ শুরু করেন। দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। শেষ পর্যন্ত আমার কাছ থেকে টাকা না পেয়ে মামলার অভিযুক্তদের সাথে আঁতাত করেন। এমনকি অভিযুক্তদের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের সবকিছুই চূড়ান্ত করেন। বিষয়টি জানার পর সরাসরি আমি থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়েরের কাছে যাই। বিষয়টি শোনার পর তিনি পুনঃতদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশরাফ হোসেনকে।

এদিকে চকরিয়া পৌরশহরের বেশ কয়েকটি অভিজাত রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলের মালিক ও কর্মচারীরা জানান, পুলিশ কর্মকর্তা নূরে খোদা সিদ্দিকী প্রতিনিয়ত নারী নিয়ে তাদের রেস্তোরাঁয় যেতেন এবং একান্তে সময় কাটাতেন। যেসব নারী নিয়ে তিনি হোটেলে যেতেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার বাদী বা বিবাদী পক্ষের লোকজন।

চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের জানান, আমরা যারা নতুন যোগদান করেছি, তারা সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের মন জয়ের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার কাছে অনেকে মৌখিকভাবে নূরে খোদা সিদ্দিকীর ব্যাপারে নানা অভিযোগ করতেন। পরে বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। পরবর্তীতে তাকে এখান থেকে বদলি করা হয়।

চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম জানান, নতুন বা পুরনো পুলিশের যে সদস্য অনৈতিক কর্মকা-ে জড়াবেন তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি পেতে হবে। যা ইতোমধ্যে নূরে খোদা সিদ্দিকীর বেলায় ঘটেছে। অতএব উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক কোনো পুলিশ সদস্য অনিয়মে না জড়িয়ে সম্পূর্ণ পুলিশী সেবা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের মনে স্থান করে নিতে হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

আরো সংবাদ