ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহে দুর্নীতি, ফের ত্রাণবাহী ট্রাক জব্দ! - কক্সবাজার কন্ঠ

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃহস্পতিবার

বিষয় :

প্রকাশ :  ২০১৯-০৪-৩০ ১৩:৩৩:৫৮

ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহে দুর্নীতি, ফের ত্রাণবাহী ট্রাক জব্দ!

কক্সবাজার কন্ঠ ডেস্ক: কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্ট ফের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি’র) প্রদত্ত রোহিঙ্গাদের ত্রাণবাহী ট্রাক জব্দ করেছে বিজিবি। ৩০ এপ্রিল সকালে উপজেলার মরিচ্যা গরুর হাট নামক স্থানে তল্লাশীকালে উখিয়া বালুখালী হতে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রাকটি (চট্টমেট্রো-ট-৬৪১১) ফেলে চালক পালিয়ে যায়। পরে ট্রাক তল্লাশী করে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা মূল্যের ২৫ হাজার কেজি এ্যাংকর ডাল উদ্ধার করে। বিজিবি জানায়, ট্রাকসহ জব্দকৃত মালামালের মূল্য ৭২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
একই কায়দায় ২৪ এপ্রিল রাতে ত্রাণবাহী কার্ভাড (চট্টমেট্টো-ট-১১-৯৪৩১) ভ্যান জব্দ করে ৩৪ বিজিবি। আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন এনজিও সংস্থা’র প্রদানকৃত ত্রাণসামগ্রী ক্যাম্পগামী না হয়ে এনজিও’র অসাধু কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কক্সবাজারসহ দেশের আনাচে-কানাচে পাচার হচ্ছে। জব্দকৃত মালামালসহ কাভার্ড ভ্যান বালুখালী শুল্ক কার্যালয়ে জমা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিনায়ক আশরাফ উল্লাহ রনি।
এ বিষয়ে জানতে ডব্লিউএফপি’র লজিষ্টিক অফিসার মুনতাসির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গার খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডঋচ)। এই ডব্লিউএফপি এর কক্সবাজার অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে খাদ্য সরবরাহে নিযুক্ত ঠিকাদার অপকর্মে ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি এতোটাই সুক্ষ্ম ও পেশাদারী কায়দায় সম্পন্ন হয় যে, আপাতদৃষ্টিতে তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হবে। ডব্লিউএফপির আওতায় নিযুক্ত এক সরবরাহকারী ঢাকার রাজারবাগের জহুরা কামাল ট্রেডিংয়ের মালিক জনৈক টিপু। মূলত: মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএস এইড এর রোহিঙ্গাদের জন্য দেয়া খাদ্য সাহায্য তদারকি এবং বিলিবন্টন করে থাকে ডব্লিউএফপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার জহুরা কামাল ট্রেডিং অবৈধভাবে তার সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে কক্সবাজারের কিছু অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীকে। জানা গেছে, কথিত সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট এই বিশাল দুর্নীতির মূল কারিগর।
শহরের খুরুশকূল রোডের সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক শ্রীমন্ত পাল সাগর এবং চাল বাজারের এসবি এন্টারপ্রাইজের মালিক বুলবুল তালুকদার মিলে বানিয়েছেন সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট। এই সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট ঢাকার জহুরা-কামাল ট্রেডিংয়ের মালিক টিপুর কাছ থেকে বিরাট অংকের টাকা দিয়ে ডব্লিউএফপিকে চাল-ডাল সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে। উল্লেখ্য, চাল এবং ডালই হলো রোহিঙ্গাদের প্রধান খাদ্য উপকরণ।
সূত্র জানিয়েছে, সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট বহুমুখী খাদ্য দুর্নীতিতে জড়িত। এরা সরকারি খাদ্য গুদামের অসাধু কর্তাদের সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সরকার কর্তৃক কেনা ভালো মানের চাল বাইরে বিক্রি করে দেয়। তার বদলে নিম্নমানের এবং অনেক সময় পঁচা চাল সরকারি গুদামে জমা করে দেয়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের চাল-ডাল সরবরাহের দুর্নীতি গোপনে সম্পাদনের জন্য এই সাগর-বুলবুল বিসিকে একটি পরিত্যক্ত গুদামকে বেছে নিয়েছে। কক্সবাজার শহরের মৃত কালু কোম্পানির মালিকানাধীন বিসিকের এই পরিত্যক্ত গুদামটি অনেক আগেই দেনার দায়ে ব্যাংকের নিলামে উঠেছে। বর্তমানে এটি ব্যাংকের মালিকানাধীন।
এদিকে সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বিক্রি করে দেয়া চাল-ডাল নামমাত্র দামে সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সস্তায় চাল ডাল কেনার জন্য প্রতিটি ক্যাম্পে নিযুক্ত আছে সাগর-বুলবুলের লোকজন। এসব চাল-ডাল জমা করা হয় বিসিকের সেই পরিত্যক্ত গুদামে। এছাড়া খাদ্য গুদামের জালিয়াতির চাল এবং নানান ভাবে সংগ্রহ করা নিম্নমানের চাল-ডাল সংগ্রহ করেও গুদামজাত করে তারা। সেখানে ইউএস এইড এর ছাপানো বস্তায় এইসব চাল ডাল প্যাকেটজাত করে। এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য উপকরণ প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া এবং খাদ্য উপকরণ মানসম্মত কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব ডব্লিউএফপি এর কক্সবাজার অফিসের কর্মকর্তাদের।
জানাগেছে, ডব্লিউএফপি এর এই কর্মকর্তারা সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেটের দুর্নীতির সহযোগী উপকারভোগী। তারা খাদ্য দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারার অংশীদার হিসেবে সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেটের অপকর্ম চেপে যান।
এ ব্যাপারে সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক শ্রীমন্ত পাল সাগরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ডব্লিউএফপির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার বলে দাবী করেন। তবে তিনি তার অপকর্ম স্বীকার করে বলেন, দুই টাকা বেশী লাভ করতে হলে এদিক-সেদিক করতে হয়।
এদিকে শহরের ডব্লিউএফপি এর অফিসে সরেজমিনে যোগাযোগ করতে গেলে মূল ফটকে দায়িত্বরত ৩ সিকিউরিটি গার্ড অপারগতা জানান।
এ সময় তাদের কাছে ওই অফিসের দায়িত্বশীল কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নাম্বার চাইলে, দেয়া যাবে না বলে উত্তর দেয়। এ সময় প্রতিবেদক কথা না বললে পরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আক্ষেপ করতে পারে বলে জানালে দায়িত্বরত সিকিউরিটিরা উদ্যত ভঙ্গিতে বলেন, যা ইচ্ছা তা করেন। কোনো সমস্যা নাই।

আরো সংবাদ