পুলিশ বক্সের সামনে থেকে তুলে নেয়া হয় পর্যটক নারী - কক্সবাজার কন্ঠ

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার

প্রকাশ :  ২০২১-১২-২৩ ১৪:৪৯:৩৪

পুলিশ বক্সের সামনে থেকে তুলে নেয়া হয় পর্যটক নারী

বিশেষ প্রতিবেদক :  কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী পর্যটক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ৩ জন যুবক মিলে ওই নারী পর্যটককে ধর্ষণ করে হোটেলে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই পর্যটক দম্পতি ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‌্যাব-১৫ এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।

ওই নারীর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন ওই নারী পর্যটক। উঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকালে যান সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে; কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুঁপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিন জন। এর পর তাকে নেয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী আমির হাফেজ (২০) কক্সবাজার কন্ঠকে জানান, কক্সবাজার পর্যটন গলফ মাঠ সংলগ্ন সানিবীচ স্কুলের সামনে থেকে আশিক নামের একজন যুবক ওই পর্যটক নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাইকযোগে নিয়ে যান। এতে স্থানীয় এক যুবক বাঁধা দিলে তাকে ছিনতাইকারি বলে পুলিশ বক্সে ঢুকিয়ে দেন আশিক। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পর্যটন গলফ মাঠের সানিবীচ স্কুলের সামনে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। এতে হৈচৈ শুরু হলে পুলিশের সামনে থেকে ওই নারীকে নিয়ে বাইকযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আশিক।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী আমির হাফেজ আরও জানান, আমি চাকরি করি পর্যটন গলফ মাঠের শৌচাগারের ইজারাদার রুবেলের অধীনে। এর আগে তারা আমার কাছ থেকে নগদ টাকা ও হাতে থাকা মোবাইল সেটটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আরও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবিতা চত্বর সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ওই পর্যটক নারীকে জিম্মি করে বাইকযোগে আশিকসহ আরও কয়েকজন যুবক নিয়ে যায়।

এদিকে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরতে এসে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের ভাষ্যমতে, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। র‌্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়। আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন। জয়া তার অন্যতম সহযোগী। তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী নারীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।

ওই নারী জানান, তিনি স্বামী ও আট মাসের সন্তানসহ বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজনে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় ৩ যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুঁপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে তারা তাকে ধর্ষণ করেন।

এরপর তাকে জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা তাকে আবারও ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি কাউকে জানালে স্বামী-সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে রুমে বন্ধ করে চলে যান। পরে তিনি জানালা দিয়ে এক যুবকের সাহায্য নিয়ে নিজেকে উদ্ধার করেন। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেও তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেনি পুলিশ। পরে ভুক্তভোগী ঘটনাটি র‌্যাবকে জানান। র‌্যাবের সহায়তায় তার স্বামী-সন্তানকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর জিয়া গেস্ট ইনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে র‌্যাব।

এতে দেখা যায়, তিন যুবক অটোরিকশায় এক নারীকে নিয়ে আসেন। দুজন ওই নারীর সঙ্গে থাকেন। আরেকজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। সে সময় রিসিপশনে হোটেলের ব্যবস্থাপক ছোটন ছিলেন। এরপর তিন যুবক ওই নারীকে নিয়ে ওপরে চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবকরা বেরিয়ে গেলেও ওই নারীকে নামতে দেখা যায়নি।

র‌্যাব জানায়, এই ফুটেজ থেকে দুজনকে শনাক্তের পর ওই নারীকে তাদের ছবি দেখানো হয়। তিনি তাদের চিনতে পেরেছেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, সামান্য ধাক্কাধাক্কির কারণে তারা আমার এতো বড় ক্ষতি করল। বার বার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি। বেড়াতে এসেছিলাম বেতন পাওয়ার খুশিতে। এখন স্ত্রীর অবস্থা ভালো না। তাকে নিয়ে চিন্তায় আছি।
র‌্যাব-১৫-এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, এ ঘটনায় রিয়াজ উদ্দিন ছোটন নামে হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে। তিনি ঘটনার পর পলাতক ছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনজনের মধ্যে দুইজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার সংবাদকে বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ওই নারী মামলা করবেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে। সমস্যা হচ্ছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা বাঞ্চনীয়, তার অভাব রয়েছে। অনেক সময় পর্যটকরা নির্বিঘেœ ঘুরে-বেড়াতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। গত কয়েক মাসে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানের পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

গত তিন মাসে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ৫ জনকে হত্যা করেছে। এর সাথে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সহিংসতা যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে দলবেঁধে পর্যটক নারীকে জিম্মি করে ধর্ষণ করা। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও সন্ত্রাসীদের দমন করা না গেলে কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাবে।

 

 

আরো সংবাদ