রোহিঙ্গা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের ধারণা পেয়েছে পুলিশ - কক্সবাজার কন্ঠ

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ :  ২০২১-১০-০৬ ১৩:১১:৩২

রোহিঙ্গা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের ধারণা পেয়েছে পুলিশ

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার : রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যায় কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে ধারণা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশসহ নানা তদন্তকারি সংস্থা হত্যাকান্ডের পেছনের খবর জেনে গেছে। এ কারণে যেকোন সময় হত্যাকান্ডের মুল আসামীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। বুধবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্পে জেলা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, সিআইডি থেকে শুরু করে অনেক তদন্তকারি সংস্থা এক যোগে কাজ করছে। যদিও জেলা পুলিশ মামলার তদন্তের কাজটি করছে। তবে ঘটনার মোটিভ এবং ঘটনার পেছনে সরাসরি কারা যুক্ত, এসব বিষয়ে আমরা একটি সম্মুখ ধারনা পেয়ে গেছি। সেদিক দিয়ে আমরা বলতে পারি যে তদন্তের কাজ অনেক এগিয়েছি। এ কারণে ঘটনার মুল অভিযুক্তদের খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান আরও জানান, ‘উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে আসা নানা তথ্য নোট নিচ্ছি। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় সবকিছু উম্মুক্ত করা যায় না। আমরা আমাদের মত করে মামলার তদন্ত কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এতে আমরা আশান্বিত।

এদিকে, উক্ত মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আরও ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে ৩দিন করে রিমান্ড নিয়েছে পুলিশ। বুধবার (৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালত ৩ জনের ৩দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৫ বøকের বাসিন্দা জকির আহমদের ছেলে জিয়াউর রহমান, লম্বাশিয়া ৮ ডবিøউ ক্যাম্পের এইচ ৫৪ নং বøকের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সালাম ও ৫নং ক্যাম্পের রজক আলীর ছেলে মো: ইলিয়াছকে আদালতে আনে পুলিশ। এ নিয়ে উক্ত মামলার ৫ জন রোহিঙ্গা যুবককে তিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। এসময় নিজ অফিসে অস্ত্রধারীরা তার বুকে পরপর ৫ রাউন্ড গুলি করে। এসময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এ ঘটনায় নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একখানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য ও উখিয়া থানা পুলিশ পৃথকভাবে ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক জানান, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত আছে, সেই ব্যাপারেও তারা তথ্য দিচ্ছে। সবমিলিয়ে মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশের জালে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শিগগরিই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ জানান, আমার ভাই রোহিঙ্গাদের জন্য কথা বলার কন্ঠস্বর ছিলো। রোহিঙ্গাদের বিপদে-আপদে এবং অধিকার আদায়ে সব সময় তিনি কথা বলতেন। এমনকি সুষ্ঠু সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন। যার কারণে প্রত্যাবাসন বিরোধী তথা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। সন্ত্রাসীদের চোখে আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা ও তাদের জন্য কথা বলা। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেনো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন ছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজমান। প্রিয় নেতা হত্যাকারিদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।

 

আরো সংবাদ