রোহিঙ্গা শিবিরে যৌথ অভিযানে ধরা পড়েনি কোনো সন্ত্রাসী - কক্সবাজার কন্ঠ

রোববার, ৫ মে ২০২৪ ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ :  ২০২৩-০৮-২৭ ১৮:৫২:৪৪

রোহিঙ্গা শিবিরে যৌথ অভিযানে ধরা পড়েনি কোনো সন্ত্রাসী

জসিম সিদ্দিকী : কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার (২৬ আগষ্ট) প্রথম দিনের অভিযানে কোনো সন্ত্রাসী ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি উদ্ধার হয়নি ইয়াবা ও অস্ত্র। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, অভিযানে নামার খবর আগে ভাগে ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা শিবির থেকে পালিয়ে পাশের পাহাড়ের আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যান। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন যৌথবাহিনীর এই অভিযান চালানো হবে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এ অভিযানে জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), জেলা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর ২৭০ জন সদস্য অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে এপিবিএনের ১০০ জন, র‌্যাবের ৪০, বিজিবির ৪০, জেলা পুলিশের ৪০ এবং আনসারের ৫০ জন সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও এপিবিএন সূত্র জানায়, গেল শনিবার বেলা দুইটার দিকে উখিয়ার বালুখালীর ক্যাম্প-৮ পশ্চিমে অভিযান শুরু হয়। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরের মধ্যে বালুখালীর এই শিবিরেই গোলাগুলি, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগে রোহিঙ্গাবসতি জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে।

এই ক্যাম্পে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি-সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার অভিযানে একজন সন্ত্রাসীকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, সবশেষ গত মঙ্গলবার রাতে এই বালুখালী শিবিরে (ক্যাম্প-৮) আরসার সন্ত্রাসীরা মো. ইউসুফ (১৬) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোরকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মাদ্রাসা ছাত্র ইউসুফ আরএসওর সদস্য ছিল।

উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা শিবিরে পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেয়া তথ্য মতে, গত ৮ মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৫১টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ১৮ সদস্য ও আরএসওর ২ জন নিহত হন। আর রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছরে আশ্রয় শিবিরগুলোয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১৮৯ রোহিঙ্গা।

শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে এপিবিএন, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনী রয়েছে। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন যৌথবাহিনীর এই অভিযান চালানো হবে।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার পালংখালীতে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের তৈরি একটি রিভলবারসহ আরসার অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ইউনুস উখিয়া-টেকনাফের শিবিরে রোহিঙ্গাদের গড়ে তোলা মক্তব-মাদ্রাসার রোহিঙ্গা শিক্ষকদের সংগঠন (একাংশের) ওলামা কাউন্সিলের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা ইউনুস উখিয়ার থায়ংখালী তাজনিমার খোলা ক্যাম্প-১৯ সি-১৩ বøকে শরণার্থী হিসেবে থেকে আরসার কর্মকাÐ পরিচালনা করে আসছিলেন।

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুস স্বীকার করেন বর্তমানে আরসার সদস্যদের কাছে ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণে হাত বোমা রয়েছে। আরসা, আরএসও, নবী হোসেন ও মুন্না বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার যৌথবাহিনীর মূল লক্ষ্য।

বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির ৩০তম সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক-অস্ত্র চোরাচালান রোধে সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

আরো সংবাদ