মালিকদের সভায় বক্তারা দেশে লবণের ঘাটতি নাই - কক্সবাজার কন্ঠ

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার

প্রকাশ :  ২০১৯-১১-১৯ ১২:৫৭:২৬

মালিকদের সভায় বক্তারা দেশে লবণের ঘাটতি নাই

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: দেশে লবণের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে, কোন ধরনের ঘাটতি নাই। বর্তমান যে পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে তা দিয়ে আরো অন্তত দুই মাস চলবে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লবণের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে একটা কুচক্রিমহল লবণের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা মূলত এ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৯ নভেম্বর সকালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সভায় মিল মালিকরা এসব কথা বলেন।

কক্সবাজার শহরের তারকা মানের একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হল অনুষ্ঠিত সভায় মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেছেন, বর্তমানে তিন লক্ষ মেট্রিক টনের ওপরে লবণ উদ্বৃত্ত। কিছু মিল মালিকের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটা শ্রেণী। আমাদের কঠোরতায় ওই রকম লবণ আমদানি বন্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে। আমরা লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধান চাই।

উন্মুক্ত বক্তব্যে লবণ ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের বাজারে লবণের কোন সংকট নেই। অথচ ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা রাতে এই লবণ নিয়ে ঘটে গেছে তুঘলকি কান্ড। সিলেট বিভাগজুড়েই একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটছে একটি চক্র। তবে রাতেই ওই চক্রকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।

লবণ মিল মালিকদের ওই সভায় বক্তব্য রাখেন -সমিতির সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, আফতাব হোসেন, মাষ্টার আব্দুল কাদের, এম কায়সার ইদ্রিস, ফজলুল হক, ওমর ফারুক মিঠু, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। এসময় দেড়শতাধিক মিল মালিক উপস্থিত ছিলেন।

সারাদেশের লবণমিল মালিকরা দাবী তুলেন, আয়োডিনের সর্বোচ্চ ১০০০ থেকে ১২০০ হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত দামে। আয়োডিনের দাম কমানো প্রয়োজন।

সাধারণ সভায় মিল মালিকরা লবণশিল্প বাঁচানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, কালো বাজারি, উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় লবণ শিল্প। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিকটন অবিক্রিত লবণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালো বাজারিদের লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ খাত মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারছেনা। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাত। চলমান দরপতন অব্যাহত থাকলে লবণশিল্পকে রক্ষা সম্ভব হবেনা।

লবণ মিল মালিক, ব্যবসায়ী, চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের দাবী, দেশীয় লবণশিল্প বাঁচাতে সমস্ত লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে মাঠে ফেরানো যাবেনা চাষিদের। পরনির্ভর হবে দেশ। বাড়বে বেকারত্ব। সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

৮০ কেজির লবণের বস্তা মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে কেজিতে পড়ছে মাত্র ৪ টাকা। যা দিয়ে মজুরি বা উৎপাদন খরচও সামাল দিতে পারছেনা চাষিরা। অথচ বাজারে প্যাকেটজাত লবণ কেজিতে বিক্রি করা হয় প্রায় ৪০ টাকা। উৎপাদনের পর থেকে বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত অন্তত ৩টি হাত বদল হয় লবণের। প্রত্যেক হাতে লাভ পড়ে। কেবল লোকসান সয়েই যেতে হচ্ছে ‘চিরবঞ্চিত’ চাষাদের।

লবণ মিল মালিকদের একটি সুত্র জানায়, অপরিশোধিত লবণ পরিশোধিত তথা খাবার উপযুক্ত ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় টাকা খরচ পড়বে। সে হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে ৫ টাকার নীচে। কিন্তু বাজারে ভোক্তারা কিনছে প্রায় ৪০ টাকা। লবণ চাষিদের অবহেলা, রাঘববোয়াল ও শিল্প কারখানার মালিকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘দরদি মনোভাব’-এর কারণে এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণের মৌসুম। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। গেল মৌসুমেও অন্তত ৬ লাখ মে.টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল। সব মিলিয়ে দেশে কোন সংকট পড়বেনা লবণের।

এদিকে ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। উক্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আবসার। তিনি উক্ত বৈঠকে লবণ ও চালের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মে.টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মে.টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ২৯ হাজার ২৮৭ জন। এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মে. টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মে.টন। যা বিগত ৫৮ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

আরো সংবাদ